স্কুল কলেজে হ্যান্ডবল খেলা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কেন?





স্কুল কলেজে হ্যান্ডবল খেলার জনপ্রিয়তা 

বাংলাদেশে খেলাধুলার জগতে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন বা ভলিবল যেমন দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয়, তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে হ্যান্ডবলও ধীরে ধীরে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে জায়গা করে নিচ্ছে। আগে এই খেলার সাথে অনেকেই খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না, কিন্তু এখন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে—স্কুল ও কলেজে হ্যান্ডবল খেলা এত দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে কেন? চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

১. সহজ নিয়ম ও দ্রুত শেখার সুযোগ

হ্যান্ডবলের অন্যতম বড় সুবিধা হলো এর নিয়ম তুলনামূলকভাবে সহজ। খেলাটি শেখার জন্য খুব বেশি সময় লাগে না, এবং মৌলিক নিয়মগুলো সহজেই শিক্ষার্থীরা রপ্ত করতে পারে। ফুটবল বা বাস্কেটবলের মতো কৌশল না সহজ নিয়ম থাকায় নতুন খেলোয়াড়দের জন্য এটি শুরু করা সহজ। এই কারণে নতুন প্রজন্মের মধ্যে খেলাটির প্রতি আগ্রহ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২. কম খরচ ও সহজ অবকাঠামো

হ্যান্ডবল খেলার জন্য বড় কোনো মাঠ বা ব্যয়বহুল সরঞ্জাম প্রয়োজন হয় না। একটি সাধারণ কোর্ট, একটি হ্যান্ডবল এবং কিছু বেসিক সুরক্ষা সামগ্রী থাকলেই খেলা শুরু করা যায়। অনেক স্কুল ও কলেজের মাঠেই সামান্য পরিবর্তন এনে খেলার ব্যবস্থা করা সম্ভব, যা বাজেট-সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য।

৩. শারীরিক ফিটনেস বৃদ্ধিতে কার্যকর

শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে হ্যান্ডবল একটি দুর্দান্ত খেলা। এতে দৌড়ানো, লাফানো, বল ধরা ও ছোঁড়া—সবকিছুই আছে, যা পুরো শরীরের ব্যায়াম করায়। ফলে পেশী শক্তি, গতি, স্ট্যামিনা এবং হাত-চোখের সমন্বয় বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত হ্যান্ডবল খেলা শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে সক্রিয় ও ফিট রাখতে সহায়ক।

৪. দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি

হ্যান্ডবল একটি দলগত খেলা, যেখানে সবার মধ্যে সমন্বয়, যোগাযোগ ও পারস্পরিক সহায়তা অপরিহার্য। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে এই খেলা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, সহমর্মিতা এবং একে অপরকে সহযোগিতা করার মানসিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ভবিষ্যতে সামাজিক ও পেশাগত জীবনে এই দক্ষতা অনেক কাজে আসে।

৫. প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি

বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন নিয়মিত আন্তঃস্কুল ও আন্তঃকলেজ হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে। এসব প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছে এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকায় খেলোয়াড়রা আরও উৎসাহিত হয়।

৬. শিক্ষকদের ও কোচদের উদ্যোগ

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক ও প্রশিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের হ্যান্ডবল শেখাতে আগ্রহী হচ্ছেন। কোচদের প্রশিক্ষণ, নিয়মিত প্র্যাকটিস সেশন এবং খেলোয়াড়দের মোটিভেশন দেওয়ার মাধ্যমে খেলাটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিছু প্রতিষ্ঠানে বিশেষ হ্যান্ডবল ক্লাবও গড়ে উঠেছে।

৭. আন্তর্জাতিক সাফল্যের প্রভাব

বাংলাদেশের হ্যান্ডবল দল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করছে এবং কিছু ক্ষেত্রে সাফল্যও অর্জন করেছে। এসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে খেলাটির প্রতি আগ্রহ জন্মাচ্ছে। অনেকে এখন এই খেলার মাধ্যমে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখছে।

৮. মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, পরীক্ষা ও অন্যান্য চাপের মধ্যে খেলাধুলা মানসিক স্বস্তি এনে দেয়। হ্যান্ডবল দ্রুত গতি ও উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ায় এটি খেলোয়াড়দের মনোযোগ ধরে রাখতে এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিনোদনমূলক ও স্বাস্থ্যকর মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

উপসংহার

হ্যান্ডবল এখন আর কেবল একটি “কম পরিচিত” খেলা নয়—এটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সহজ নিয়ম, কম খরচ, স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং প্রতিযোগিতার সুযোগ—সব মিলিয়ে এই খেলাটি তরুণ প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে এবং অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণের মান বাড়ানো যায়, তবে হ্যান্ডবল বাংলাদেশের স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে প্রধান খেলাগুলোর একটি হয়ে উঠতে পারে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url