বিকেলে নিয়মিত খেলার উপকারিতা

 




বিকেলে নিয়মিত খেলার উপকারিতা

আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং অবসর সময়ের অভাবে আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে শরীরচর্চা অনেকটাই কমে গেছে। বিশেষ করে শিশু, কিশোর ও তরুণ সমাজ বিকেলের সময়টুকু মোবাইল, টেলিভিশন বা কম্পিউটারে কাটিয়ে দেয়। অথচ এই সময়টিই হতে পারে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মূল চাবিকাঠি—যদি আমরা বিকেলে নিয়মিত খেলার অভ্যাস গড়ে তুলি। বিকেলে খেলাধুলা শুধু শরীরকে সক্রিয় রাখে না, মানসিক প্রশান্তি এবং সামাজিক দক্ষতাও বাড়ায়। চলুন জেনে নিই বিকেলে নিয়মিত খেলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা।

১. শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন

বিকেলে নিয়মিত খেলা শরীরকে সক্রিয় রাখে, রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে। শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি পুড়ে গিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত দৌড়, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট বা অন্য কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করলে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ে, পেশি শক্তিশালী হয় এবং শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

২. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

শুধু শরীর নয়, খেলা মনকেও ভালো রাখে। বিকেলের খেলা দুশ্চিন্তা, ক্লান্তি ও মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। খেলার সময় শরীরে ‘এন্ডোরফিন’ নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো রাখে ও হতাশা কমায়। এছাড়া দিনের ক্লান্তি দূর করে নতুন করে কাজ বা পড়াশোনার উৎসাহ তৈরি করে।

৩. নিয়মিত রুটিন তৈরি হয়

বিকেলে প্রতিদিন খেলার অভ্যাস গড়ে তুললে একটি সুনির্দিষ্ট রুটিন তৈরি হয়। এটি শরীরের ঘড়িকে (Biological Clock) নিয়মমাফিক চালাতে সহায়তা করে। ফলে ঘুম ভালো হয়, সকালের কাজ সময়মতো শুরু করা যায় এবং সারাদিনে কর্মক্ষমতা বাড়ে।

৪. সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি

যেসব খেলা দলগতভাবে খেলা হয়—যেমন ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল ইত্যাদি—সেগুলোতে অংশগ্রহণ করলে সামাজিক মেলামেশা বাড়ে। বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা তৈরি হয়, এবং একসাথে কাজ করার অভ্যাস তৈরি হয়। এটি ভবিষ্যতে পেশাগত জীবনেও অনেক কাজে লাগে।

৫. বিনোদনের উৎস

বিকেলের খেলা কেবল শরীরচর্চার উপায় নয়, এটি এক প্রকার আনন্দেরও উৎস। একঘেয়ে জীবন থেকে বিরতি দিয়ে খেলার মাধ্যমে আমরা নির্মল আনন্দ পাই। খেলাধুলা শিশুদের জন্য যেমন আনন্দের, বড়দের ক্ষেত্রেও এটি মানসিক প্রশান্তির মাধ্যম।

৬. মোবাইল ও টিভির আসক্তি কমায়

বর্তমানে শিশুরা বিকেলের সময়টুকু স্ক্রিনে আটকে থাকে, যা চোখ ও মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি করলে এই স্ক্রিন আসক্তি অনেকটাই কমে আসে। মাঠে গিয়ে খেলার অভ্যাসে তাদের শারীরিক বিকাশও সঠিকভাবে হয়।

৭. আত্মবিশ্বাস ও শৃঙ্খলা গড়ে ওঠে

নিয়মিত খেলাধুলায় আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। খেলায় হারজিতের মাধ্যমে শিশুরা ধৈর্যশীলতা, সহনশীলতা এবং শৃঙ্খলার পাঠ শেখে। এতে তারা ভবিষ্যতের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শেখে।

উপসংহার

বিকেলে নিয়মিত খেলার অভ্যাস শুধু শারীরিক সুস্থতা নয়, মানসিক প্রশান্তি, সামাজিক বন্ধন এবং ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের জন্য বিকেলকে কাজে লাগানো উচিত একটি স্বাস্থ্যকর রুটিন গঠনের জন্য। তাই আসুন, আমরা নিজেরা নিয়মিত খেলাধুলা করি এবং আমাদের সন্তানদেরও মাঠে খেলতে উৎসাহিত করি—তাদের সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url