গ্রীষ্মকালে পাড়ায় ব্যাডমিন্টন খেলার ধারা




গ্রীষ্মকালে পাড়ায় ব্যাডমিন্টন খেলার ধারা

গ্রীষ্মকাল মানেই তীব্র রোদ, ঘেমে-নেয়ে একাকার শরীর, আর বিকেলের পর একটু শান্ত হাওয়া। এই সময়টাতেই পাড়ার মাঠ বা খালি জায়গাগুলোতে জমে ওঠে এক ভিন্ন আমেজ—ব্যাডমিন্টন খেলার ধারা। যদিও এই খেলা সাধারণত শীতকালে বেশি জনপ্রিয়, তবে গ্রীষ্মকালেও এখন এর জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে শহরের অলি-গলিতে, গ্রামের উঠোনে কিংবা হোস্টেলের চত্বরে সন্ধ্যার পরপরই শুরু হয় ব্যাডমিন্টন খেলার প্রস্তুতি।

খেলাটির প্রস্তুতি

গ্রীষ্মকালের বিকেলে যখন সূর্য একটু নরম হয়, তখনই শুরু হয় খেলার আয়োজন। দুই বা চার জনের দল গঠিত হয়, কারো হাতে ব্যাট, কেউ বা জাল বাঁধছে বাঁশ বা দণ্ড দিয়ে। যাদের নিজের র‍্যাকেট নেই, তারা বন্ধু বা বড় ভাইয়ের কাছে ধার করে নেয়। সস্তা প্লাস্টিকের শাটলককই সাধারণত ব্যবহার করা হয়, কারণ এটা সহজে ভাঙে না এবং বাতাসে টিকেও থাকে বেশি সময়।

গ্রামের পাড়ায় খেলাটি অনেক সময় বিদ্যুতের আলো ছাড়া চাঁদের আলোতেই খেলা হয়। শহরে বা আধা-শহরে তরুণরা পাড়ার রাস্তার পাশে বা বাসার ছাদে টিউবলাইট বা ফ্লাডলাইট দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করে নেয়। ব্যাডমিন্টন খেলার এই আয়োজনই হয়ে ওঠে এক সামাজিক মিলনমেলা।

বয়স-ভেদে অংশগ্রহণ

গ্রীষ্মকালে স্কুল কলেজ ছুটি থাকায় ছোটোদের অংশগ্রহণ বেশি চোখে পড়ে। তাদের মাঝে খেলার প্রতি তীব্র আগ্রহ থাকে। আবার চাকুরিজীবী বড়রাও কাজ শেষে শরীরচর্চা ও আনন্দের জন্য অংশ নেন। পাড়ার বয়স্করাও খেলতে না পারলেও গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগ করেন, উৎসাহ দেন, কখনো কখনো বিচারকের ভূমিকাও পালন করেন।

ব্যাডমিন্টনের সামাজিক দিক

এই খেলাটি শুধু শরীরচর্চাই নয়, বরং এটি সামাজিক সম্প্রীতি গড়তেও সহায়ক। খেলাকে ঘিরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আনন্দের মুহূর্ত। পাড়ায় অনেক সময় ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টও আয়োজন করা হয়, যেখানে পুরস্কার থাকে ছোটখাটো মেডেল বা ট্রফি, আর থাকে গর্বের হাসি। কেউ হারলেও মন খারাপ করে না, বরং পরের দিন আবার র‍্যাকেট হাতে হাজির হয়।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নতুন রূপ

বর্তমানে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের যুগে অনেকেই সন্ধ্যা কাটান স্ক্রিনের সামনে। তবে ব্যাডমিন্টনের মতো খেলা তরুণদেরকে কিছুটা হলেও সেই আসক্তি থেকে বের করে আনতে সাহায্য করে। অনেকেই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাড়ার ম্যাচের ছবি বা ভিডিও আপলোড করে, কখনো লাইভও করে। এতে করে খেলার প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়ে।

কিছু চ্যালেঞ্জ

গ্রীষ্মকালে ব্যাডমিন্টন খেলার কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে ঘাম হয় বেশি, অনেক সময় মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি দেখা দেয়। আবার খোলা জায়গায় বাতাস থাকলে শাটল নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়। তবে খেলার প্রতি ভালোবাসা এই চ্যালেঞ্জগুলোকে তুচ্ছ করে দেয়।

উপসংহার

গ্রীষ্মকালে পাড়ায় ব্যাডমিন্টন খেলার ধারা এক ধরনের সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে। এটি শুধু একটি খেলা নয়, বরং এক ধরনের সামাজিক মেলবন্ধন, একত্রে আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যম। স্বাস্থ্য, বিনোদন ও সম্প্রীতির অপূর্ব মিশেলে এই খেলা গ্রাম ও শহর—সবখানেই হয়ে উঠেছে প্রাণের স্পন্দন। আগামী প্রজন্মও যেন এই ধারাকে টিকিয়ে রাখে, সেটাই কাম্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url